পূজা বলতেই বাঙালি সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো ধর্মীয় এক বড় উৎসব। চারিদেকে তাই শুরু হয়েছে এই দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। একদম শেষ পর্যায়। অর্থাৎ ক’দিন বাদেই এই ধর্মীয় উৎসব শুরু। পুজোর উপাচার থেকে প্রতিমা মন্ডপ সজ্জার সরঞ্জামের সঙ্গে যুক্ত যারা তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। .
জানা যায়, দুর্গা পূজা মানেই শোলার চাঁদমালা, মুকুট, কদম কিংবা ঝোরা ফুল। তবে দুর্গা পুজোর আগে শোলার এসব ফুলের চাহিদা অনেক। কারণ শোলার তৈরী কদম ফুল দেবী দুর্গার সন্তষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। একইসাথে শুভ কাজ বা মানতের জন্য ব্যবহার হয় এসব ফুল। তাই এসময় শোলার ফুল তৈরীর কারিগরা থাকেন অনেক ব্যস্ত। কিন্তু কারিগররা বলছেন, কাঁচা শোলা পাওয়া যায় না। তাছাড়া শোলা এখন কিনে নিতে হয়। খাটুনির তুলনায় আয় কম হওয়ায় বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাবে আগ্রহী নয়। শুধু পূর্ব পুরুষের পেশা ধরে রাখতে চাইছেন কেউ কেউ। এক সময় উপজেলায় অনেকেই এই কাজ করত এখন করে মাত্র দু’টি গ্রামের ১২-১৪টি পরিবার। .
কাঁচা শোলা রোদে শুকিয়ে মাপ মত কেটে খোসা ছাড়ানো হয়। দুধ সাদা শোলা কেটে নানা মাপের ফুল তৈরি হয়। চাহিদা মত রঙ লাগানো হয়। বাড়ি থেকে পাইকারি বিক্রি হয় এই শোলার ফুল। দুর্গোৎসবের সময় থেকে সারা বছর চাহিদা থাকে কদম ফুলের। উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের ল²ীপুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সি গোবিন্দ বলেন, তারা কদম ও ঝরা দুই ধরনের মালা তৈরি করে থাকেন। উপজেলা সদরের দোকান ছাড়াড় জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ক্রেতারা মালা কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে শোলা পাওয়া যায় না তাই এই পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। শোলা পাওয়া গেলেও অনেক দূর দূরান্ত থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়। আগে এমনিতে শোলা পাওয়া যেন এখন কিনে নিতে হয়।.
তিনি আরও বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের মধ্যে বলা হয়ে থাকে ১২ মাসে ১৩ পূজা। আর এ সব পূজায় সোলার তৈরি কদম ফুল, ঝোরা ফুল বিশেষ প্রয়োজন তাই এ শিল্পকর্মটি বেঁচে রয়েছে। বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। এদিকে বরাই চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের বাবুল চন্দ্র মহন্তর স্ত্রী রঞ্জনা রানী বলেন, পরিত্যক্ত নিচু জমিতে এ সোলা জন্মে এবং বর্ষাকালে তা সংগ্রহ করতে হয়। জমির মালিকরা সোলাকে আগাছা বলে মনে করায় এসব পরিষ্কার করে কৃষি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এ কারণে সোলার সংকট বাড়ছে। আগে জমি থেকে বিনা পয়সায় এসব সোলা সংগ্রহ করলেও বর্তমানে জমির মালিককে কিছু অর্থ দিতে হয়। তাছাড়াও শোলা সংগ্রহ করতে বাড়ীর কর্তাকে ছুটিতে পঞ্চগড়, নীলফামারী, বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায়। তারা শুধু শোলা দিয়ে কদম ফুল, ঝোরা ফুল তৈরী করেন না। তারা দেবী দুর্গাসহ মাটির বিভিন্ন ধরনের প্রতিমাও তৈরী করেন।.
উপজেলার শীবনগর ইউনিয়নের পালপাড়া দুর্গা পূজা মন্ডপের পুরোহিত শিবায়ন চক্রবর্তী বলেন, শোলার তৈরী কদম ফুল ঠাকুর (দেবী দুর্গা, কালী, লক্ষী....) সন্তষ্টির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। একই সাথে তিনি বলেন, শোলার কদম বা ঝোরা ফুল শুভ কাজ বা মানতের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ঘরের দরজায় এই ফুল স্থাপন করেন যাতে কোন অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে না পারে।.
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপনার মতামত লিখুন: